খুশী পরিবার
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
যৌথ পরিবার তো এখন বড় একটা দেখা যায় না। তবে প্রদীপদের পরিবারটা বড় পরিবারের তকমা লাগিয়ে রেখেছিলো অনেকদিন।
এখন নতুন প্রজন্মে ছেলেপিলেদের বিয়ে হচ্ছে… তারা একটু আধুনিক ভাবে হাতপা ছড়িয়ে থাকতে চায়…তাই ঘর চাই… তারপর ভালো চাকরীর সন্ধানে বাইরে যাওয়া চাই। আর করবেটাই’বা কি? ভালো পড়াশুনো করে তো আর যা হোক কিছু কাজ করা যায় না! বড়দার ছোটছেলে বাইরে চাকরী করে… আর বড়ছেলের বিয়ে হয়েছে…এবাড়িতেই থাকে। মেজদার এক মেয়ে আর এক ছেলে… দুজনেই বাইরে পড়তে গেছে। প্রদীপের দুই মেয়ে ছোট…পড়াশুনো করে।বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে সব ভালো পরিবারে। তারা সবাই ভালোই আছে।
বাড়ির সবাই মিলে একদিন ঠিক করলো… এই বিশাল পুরোনো বাড়ি মেরামত করা অনেক ঝামেলার…আর এই আগেকার স্টাইলের বাড়িতে বারান্দা, উঠোন এইসব করে জায়গার অপচয়। তাই বাড়ি সারানোর থেকে এবাড়ি ভেঙে নতুন প্ল্যানে বাড়ি করা হোক। প্রোমোটারের তৈরী ফ্ল্যাট ওরা চায় না। শুধু তিনতলা বাড়িটা আবার নতুন করে বানাতে চায়। এক একটা তলা মর্ডান প্ল্যান মাফিক বানাবে। তাতে বড় ডাইনিং কাম ড্রয়িংরুম… বড় বড় তিনটে করে বেডরুম, মর্ডান বাথরুম, কিচেন সবই হবে। টাকার অভাব ওদের নেই। নিজেরা চাকরী করে। এখন তো পরের প্রজন্মও দাঁড়িয়ে গেছে। আর ওরাও এই পুরোনো বালি ঝুরঝুরে, স্যাঁতসেঁতে আদ্যিকালের বাড়িতে থাকতে চায় না।
ভালো আর্কিটেক্টকে দিয়ে প্ল্যান বানিয়ে কন্ট্রাকে মিস্ত্রী লাগিয়ে বাড়ি বানানো শুরু হলো। নিজেরাও ওরা দেখাশুনো করলো। অবশেষে তিনতলা এক বিশাল বাড়ি তৈরীও হলো। তিনভাই নিজেদের সুবিধামত এক এক তলা নিলো। যদিও প্রত্যেকের আলাদা আলাদা সংসার। তাও সবাই মিলে কাছাকাছি থাকা। অনুষ্ঠান, পার্বণে পাঁচফোড়নের মত মিলেমিশে আনন্দ-খুশী উপভোগ করা।
বাড়ি তো বানানো হলো। কিন্তু গৃহপ্রবেশ তো করা চাই। এই অতিমারীর প্রবাহে.. অসুখ-বিসুখের কারণে বাইরের লোক ডাকা যাবে না। শুধু পরিবারের সবাই মানে ভাইরা, বোনেরা মিলিত হবে আর নিষ্ঠাভরে পুজোটা করে একটু খাওয়াদাওয়া। সত্যনারায়ণ পুজো সকাল সকালই হয়ে গেলো। এবার ভোজনের আয়োজন।
রান্নার জন্য বাজার ওরাই করে দিয়েছিলো। রান্না করতে এলো ওদের বহুদিনের চেনা এক উড়ে ঠাকুর আর তার জোগারে। এই রাধুনের হাতের রান্না না’কি অসাধারণ। উনুন ধরিয়ে বিশাল কড়াই বসিয়ে রান্না শুরু করলো রান্নার ঠাকুর।
খানিকবাদে খবর এলো উড়ে ঠাকুর গামছা পড়ে একবার যাচ্ছে…আর একবার আসছে….। তার যাওয়া আর আসার চক্করে রান্না মাথায় উঠলো। তাকে পেটখারাপের ওষুধ দিয়ে একটা ঘরে শুইয়ে রাখা হলো। পরে একটু সুস্থ হলে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো।
অগত্যা বাড়ির মহিলা আর পুরুষেরা রান্নায় হাত লাগালো। সে এক এলাহী ব্যাপার! বাড়ির দুই ছোটমেয়ে রিনি আর ঝিনি তো হেসে অস্থির… তারা দেখে তাদের দুই জ্যেঠু ভাত, ডাল, মাছ রান্না করছে। বিশাল কড়াই নামাচ্ছে। ওদের বাবাও চাটনী, তরকারি রাঁধছে!
রোজ তো বাড়ির মেয়েরাই রাঁধে। আজ তাদের ছুটি তারা শুধু বলে বলে দিচ্ছে।
তারপর খাওয়াদাওয়া, হৈ চৈ… মজা, ইয়ার্কি, একে অপরের পিছনে লাগা… ভাই, বোন, ভাইপো, বোনপো, ভাগ্নে-ভাগ্নী ফোঁড়নের সব উপকরণ মজুত। এর নামই “প রি বা র” বড় পরিবার, খুশী পরিবার।